ঝালকাঠি প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠিতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও জোয়ারের কারণে ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বিষখালী নদীতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় পানি ঢুকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকশ ঘের প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। শতাধিক পরিবারের রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দু’দিন ধরে রান্না হয়নি নদী-তীরবর্তী স্থানের বাসিন্দাদের। সরকারি সহায়তা পেতে ৩৩৩ নম্বরে কল দিয়েও কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকালে নদীর পানির চাপে চলাচলের প্রায় ৫০ মিটার রাস্তা ভেঙে নদীতে মিশে যায়। এতে গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের লোকজনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে নৌকায় করে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুর থেকে নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ ফুট বেশি হওয়ায় বিষখালী নদী-তীরবর্তী সদর উপজেলা ও কাঁঠালিয়ায় নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত।ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন শতাধিক মাছচাষি ও কয়েকশত কৃষক। মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুর থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ ফুট বাড়তি ছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে নদী-তীরবর্তী সদর উপজেলার ভাটারাকান্দা গ্রামে চলাচলের প্রায় ৫০ মিটার রাস্তা ভেঙে নদীতে মিশে যায়। এতে ওই এলাকার পাঁচটি গ্রামের জনসাধারণের চলাচল ব্যাহত হয়। পরে স্থানীয়রা নৌকায় ১০ টাকা ভাড়ায় খেয়া পারাপারের মাধ্যমে জনসাধারণের চলাচলের ব্যবস্থা করেন। সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী বারৈকরণ খেয়াঘাট সংলগ্ন কুতুবনগর বেড়িবাঁধটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীর উত্তাল ঢেউয়ে ভেঙে গাছপালা নিয়ে নদীতে বিলিন হয়েছে। এই বেড়িবাঁধের আওতায় দুই হাজার একর ফসলি জমি ও ৫শ পরিবারের প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস হুমকির মুখে পড়েছে। ২০০০ সালে বারৈকরণ খেয়াঘাট থেকে পূর্বদিকে ১.২৫ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে বাঁধের ৫০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইয়াসের প্রভাবে এবার সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। জেলার কাঁঠালিয়া উপজলা পরিষদ ও কাঁঠালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বিষখালী তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙে পানি ঢুকে বাড়িঘরসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। বিশেষ করে কাঁঠালিয়া সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বড় কাঁঠালিয়া, পূর্ব কচুয়া, লতাবুনিয়া, রঘুয়ার দড়ির চর, সোনার বাংলা, আওরাবুনিয়া, জাঙ্গালিয়া, ছিটকী ও আমুয়া, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি, নতুন কলাবাগান, পৌরসভা খেয়াঘাট এলাকা, রাজাপুরের বাদুরতলা লঞ্চঘাট, নাপিতের হাট, চল্লিশ কাহনিয়া এলাকাসহ সুগন্ধা-বিষখালী নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে অধিক নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাটারাকান্দা গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। তার আগে রান্না করে রেখেছিলাম। রাতের পানিতে বাড়ির আঙিনা ও রান্নাঘর তলিয়ে যায়। চুলার (উনুন) মধ্যে পানি ওঠায় বুধ ও বৃহস্পতিবার দুপুরে রান্না করতে পারিনি। চিড়া-মুড়িসহ শুকনো খাবারে দুইদিন কাটিয়ে দিয়েছি।’ ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যপ্রার্থী মো. কামাল হোসেন জানান, এলাকার অনেক ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। দুপুরের রান্না করতে পারেননি অনেকেই। খাদ্য সহায়তার জন্য সরকারি সেবার হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল দিলে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ধন্যবাদ বলে কেটে দেয়। জানতে চাইলে কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানান, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। কোথাও বড় ধরনের সমস্যা নেই। উপজেলা পরিষদের পেছনের বিষখালী তীরের বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। কিন্তু তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কৃষ্ণ ঘোষ জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে তিন শতাধিক ঘের প্লাবিত ও মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা পাওয়ামাত্র দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’’
Leave a Reply